অনলাইনে টাকা আয় করা কি হালাল নাকি হারাম?

অনলাইনে আয় কি হালাল

অনলাইনে আয় করা ইসলামে জায়েজ?

আজকে আমরা জানবো, অনলাইনে আয় কি হালাল নাকি হারাম। এর পূর্বে একটি ব্লগে আমরা জানতে পেরেছি যে, এড দেখে আয় করা কি হারাম নাকি হালাল? এ নিয়ে অনলাইনে আলোচনা করতে পেরেছি। বাস্তবে যে কোনো ক্ষেত্রে হারাম ও হালাল কর্ম রয়েছে। অনুরূপভাবে অনলাইনে আয় করা এর ক্ষেত্রে কিছু কিছু দিক দিয়ে এটি হালাল আবার কোনো ক্ষেত্রে হারাম হতে পারে।

তার আগে আমাদেরকে জানতে হবে 'অনলাইন আয়' বলতে কি বুঝি?  প্রশ্নটা শুনতে হাস্যরসাত্মক মনে হলেও, মূলত এর সাথে অনেক কিছু সম্পর্কযুক্ত।


অনলাইনে আয় বলতে কি বুঝি?

প্রথমত বাস্তব দুনিয়ায় না থেকে ইন্টারনেট দুনিয়ায় উপার্জন করাকে অনলাইনে আয় বুঝায়। এখন বাস্তবে যে কোন কাজ করতে গেলে বা উপার্জন করতে গেলে তার কৈফিয়ৎ থাকে, প্রমাণ থাকে। এবং যে কেউ চাইলে যেকোনো খুব বেশি প্রতারণা কিংবা স্প্যামিং এর  সুযোগ পায়না। কিন্তু অনলাইনে অনুরূপ এমনটা হয় না।

অনলাইনে প্রতারণা করা অথবা হারাম কাজ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর আমরা সবাই জানি হালাল কাজ থেকে হারাম কাজে উপার্জন করা বেশি সহজ। হারাম কাজ বলতে সমস্ত অবৈধ কাজকে বুঝানো যায়। আর হালাল বলতে সকল বৈধ কাজ করে সৎ পথে উপার্জন করা বোঝানো যায়।

তবে মজার ব্যাপার হলো, অনলাইন দুনিয়ায় ইনকাম করার ক্ষেত্রে যতই প্রতারণা বা স্পামিং হোক না কেন, তার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদি থাকে। কেউ স্পামিং করলেও এখন অনশ্যই ধরা পড়ে। কিংবা প্রতারণা করলেও তাকে ধরার অনেক উপায় আছে, যদি ভিক্টিম সতর্ক থাকে। এবং এ নিয়ে সাইবার ক্রাইম ফাইল করতে পারে। তো এখন আমরা জানবো, 


অনলাইনে কি কি সেক্টরে কাজ করা যায়? 

প্রথমত এন্টারটেনমেন্ট সেক্টর বা মিডিয়া সেক্টর। এর মধ্যে আছে, ফেসবুক, ইউটিউব, সকল সোশ্যাল মিডিয়া। অবশ্যই মিডিয়া রিলেটেড সেক্টর গুলোতে নিউজ পোর্টাল, ব্লগ সাইট অন্য ওয়েবসাইটও থাকে। 

পরবর্তীতে থাকে কমার্শিয়াল সেক্টর। অর্থাৎ ই-কমার্স। যেমনঃ কোন পণ্য বা প্রোডাক্ট কেনাবেচার ওয়েবসাইট, ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা, কনটেন্ট কেনা বেচার ওয়েবসাইট। এমনকি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলোও এর মধ্যে আসে। এখানে যারা কাজ করে তাদেরকে আপাতদৃষ্টিতে ফ্রীলান্সার বললে ভুল হবে না। 


কারণ একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর একমাত্র উদ্যোক্তা বাদ দিয়ে বাকি যে সকল সাইট ম্যানেজার, মানি ট্রান্সফার বা ওয়ালেট গেটওয়ের কর্মী, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ওয়েব ডিজাইনার এবং ব্লগিং করতে নিয়োজিত ব্যক্তি থাকে তার প্রত্যেকজনই ফ্রিল্যান্সার। 

ক্ষুদ্র ব্যবসা। অনলাইনে চাইলে ক্ষুদ্র ব্যবসা করা যায়। যেমন গেমিং ডায়মন্ড রিচার্জ, পেমেন্ট গেটওয়ের কাজ করা, নিজ ওয়েবসাইট থেকে ছোটখাটো অনলাইন সার্ভিসিং দেওয়া ইত্যাদি।

অনলাইন জব। অনলাইনে বিভিন্ন কল সেন্টার, কাস্টমার সার্ভিসিং সেন্টারে জব করা যায়। তাছাড়া নিজস্ব জব সেক্টরও এখন অনলাইনে সক্রিয় থাকে। যেমনঃ কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, বা ব্যাংক-বীমার কাজ অনলাইনেই করা হয়। 

এভাবে অনলাইনে যত কাজ আছে তার মধ্যে থেকে সৎ পথে থেকে উপার্জন করা যায়। একইভাবে হারাম পথেও উপার্জনের উপায় আছে।


অনলাইন ক্ষেত্রটাই কি হারাম নাকি হালাল?

এখন দেখুন, সৎভাবে উপার্জন করা সকল ক্ষেত্রই হালাল। কেবল মাধ্যমটা অনলাইন বলে যে এটা হারাম হয়ে যাবে এমন কিন্তু না। অনলাইন মাধ্যম যে একপ্রকার অভিশাপ, তা কিন্তু না। এর কল্যাণকর অসংখ্য-অগণিত দিক আছে। 

ধর্মের দিক দিয়ে বলি, যারা প্রকৃত মুমিন বা বান্দা তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দ্বীন-ই ইসলাম অনলাইন মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে। সঠিক তথ্য দিতে পারছে। 

মানুষ দূরবর্তী স্থানে বসেও দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানও আহরণ করতে পারছে, যদি একটু চেস্টা চালায়। কিন্তু এটা একদিক দিয়ে কল্যাণকর যে কোনো শায়েখ এর অনুসরণ করলে তার ভিডিও দেখে সঠিক জানতে পারছি। 

অনুরূপভাবে গুগলে বা ইন্টারনেটে সার্চ করে তথ্য জানতে গেলে ভুল ও বিভ্রান্তকর তথ্যও আসে, সেটা বিচার করার জন্য মানুষের বিবেক আছে।জানুন, অনলাইনে আয় কি হালাল?

যাই হোক এখন প্রশ্ন হলো, 


কোন কোন কাজ করে অনলাইনে আয় করা হালাল আর কি হারাম হবে?

কেউ যদি অনলাইনে অসদুপায় অবলম্বন করে উপার্জন করতে যায়। বিশেষ করে, মানুষ সাথে প্রতারণা করে উপার্জন করতে যায়। তবে সেটা অবশ্যই হারাম। 

যেমনঃ অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং কাজ বা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে। সেখানে তাদেরকে গ্রাহকদেরকে বিভিন্ন সার্ভিস দিতে হয়। অনলাইন সার্ভিস দিতে গিয়ে তারা যদি টাকা নিয়ে সে কাজটি করে না দেয়, অথবা কাজ করায় ফাকিবাজি হয়, তবে অবশ্যই ঐ কর্ম করে জীবিকা তার জন্য হারাম। অনেকক্ষেত্রেই তার কর্মটি হালালই থাকে, কেবল তার বদ অভ্যাসের জন্য কর্মটি তার ক্ষেত্রে হারাম।

অনলাইনে অন্যকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আয় করার, প্রলোভন দেখিয়ে কারো কাছ থেকে টাকা নেয়া মোটেও সৎকাজ নয়। এটি হারাম। তাছাড়া যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কিংবা নিজস্ব ইউটিউব, ব্লগ, ওয়েবসাইট আছে। তারা যদি ফেক কন্টেন্ট তৈরি করে, বিশেষ করে ভুল-ভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায়। অথবা গুজব ছড়ায়, তাহলে সেটি হারাম হবে। এতে করে সে গুনাহ কামাই করবে। 

মোটকথা, অফলাইনে অর্থাৎ বাস্তবে যেভাবে কাজ করলে তা হারামের মধ্যে পড়বে, অনলাইনে ঠিক একইভাবে তা হারাম কাজগুলোতে পরিগণিত হবে। অনলাইনে চাইলে যে কেউ ভালো ব্যবসা করতে পারবে। 

সৎ পন্থায় ব্যবসা করা অবশ্যই হালাল। কারণ এতে করে অপরের উপকার করার মাধ্যমে নিজেও মুনাফা অর্জন করতে পারে। এবং এটা প্রকাশ্যে আসে এবং কেউ এতে বিভ্রান্ত হয় না। অথবা কেউ এতে প্রতারণা হচ্ছে বলে মনে করে না। কাজেই এটি অবশ্যই হালাল।

অনলাইনে অনেকেই একজন আরেকজনের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে। তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি নিয়ে নিজে লাভবান হয়, অন্যের ক্ষতি করে। এ সমস্ত কাজ অবশ্যই অন্যায়। এতে করে একজন মানুষ বিভ্রান্তির শিকার হয়। এটি চুরির সমান। এবং অনলাইনেও চুরি করার মতো নানা কাজ আছে। অনেকেই একজন আরেকজনের লেখা সৃজনশীল কাজ চুরি করে নেয়। এবং হারাম পথে কাজ করে। এ কাজ করা হারাম।


কখন ইউটিউবিং করা হারাম হবে? ইউটিউবে অনলাইনে আয় কি হালাল?

বিভিন্ন অশালীন ছবি, ভিডিও পাবলিশ করে কেউ যদি ইউটিউবিং করে, তবে তা হারাম। নারীদের খোলা মেলা ছবি প্রদর্শন করে ইউটিউবিং করা ইসলামে স্বীকৃত হয়। নারীদেরকে যেহেতু পর্দা প্রথার মধ্যে থাকতে হয়, কাজেই ইসলামের দৃষ্টিতে বেপর্দা থেকে নারীদের ইউটিউবিংও হালাল নয়। 

তবে স্ক্রিনের গোপনে থেকে যেভাবে আমরা গোপন থেকে লেখালেখি করি, ব্লগিং করি বা ক্ষুদ্র ব্যবসা করলেও তা অবশ্যই হালাল পরিগণিত হবে। কেননা পর্দার আড়ালে থেকে নারীদের হালাল পথে আয় করার নিয়ম আছে।

অনেকেই ইউটিউব চ্যানেলে ভুল ও বিভ্রান্তকর তথ্য ছড়ায়। অথবা গুজব তথ্য ছড়ায়। অথবা এমন সব তথ্য ছড়ায় যার কোন ভিত্তি নেই। এ সমস্ত কাজ অবশ্যই মিথ্যাচারের শামিল। কাজেই তখন আয় করা টাকা হারাম হয়ে যাবে।

ইউটিউব ভিডিওতে অনেকেই কোন টিউটোরিয়াল অথবা শিক্ষাদানের কথা বলে অযথা ইউজারের সময় নষ্ট করে। ইউটিউবে ভুল সব থাম্বনেল ব্যবহার করে। কিন্তু কনটেন্ট থাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এভাবে ইউজারদেরকে বিভ্রান্ত করা সঠিক নয়।


নিউজ পোর্টালের হারাম দিকঃ

 তাছাড়া বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল গুলোতে হেডলাইনে এক কথা বলা থাকে, কিন্তু কনটেন্ট এর মধ্যে থাকে অন্য কথা। এভাবেই ইউজারদেরকে বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান এর মাধ্যমে তারা ভুল পথে উপার্জন করছে। এবং এ কাজ হারাম বলে পরিগণিত হবে। কারণ এভাবে সরাসরি প্রতারণা করা হচ্ছে। কেননা কিছুসংখ্যক ইউজার না দেখেই শুধুমাত্র হেডলাইন অথবা টাইটেল দেখেই ভুল বিশ্বাস করে নেয়। মানুষের মধ্যে ভুল বিশ্বাসের জন্ম দেওয়ানো মন্দ কাজ।


ব্লগিং বা অনলাইনে লেখালেখি কখন হারাম হবে?

অনুরূপ ভাবে কেউ যদি ব্লগিং বা কনটেন্ট লেখালেখিতেও ভুল তথ্যাদি শেয়ার করে। গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে, তাহলে সেটি ও মন্দ কাজ। অথবা যদি কেউ কাউকে ভুল তথ্য দিয়ে আশ্বস্ত করে, তবে তা হারাম বলে পরিগণিত হবে। আমরা প্রায়শই কনটেন্ট রাইটারদের দেখি, তারা এমন সব টপিকে কনটেন্ট লেখালেখি করে যার বাস্তব কোন উপস্থিতি নেই।

দেখা গেল কোন একটি কার্য এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি, হয়তো ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে। অথচ সেই কার্য সম্পন্ন হয়েছে বলে কনটেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে। অথবা আমরা প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের সময় কোন একজন ব্লগারের বিকৃত এডভার্টাইজিং এর শিকার হই। এবং তথ্য বের করতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। এভাবে একজন ব্লগার সৎ পথে না থাকে নিজস্ব স্বার্থ কে গুরুত্ব দিয়ে ভিন্ন নিয়মই উপার্জন করছে।

ব্লগিংয়ে আয় করাতে এডভার্টাইজিং পাবলিশ করা জায়েজ, তবে তথ্যগুলো যথার্থভাবে উপস্থাপন করতে হয়। যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হয়। গুগল অ্যাডসেন্স এড পাব্লিশার একটা বিশেষ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নজরদারি এবং সর্তকতা অবলম্বন করে। তারা মানুষকে ভুল এডভার্টাইজিং দেখায় না এবং পর্ণোগ্রাফি এড পাব্লিস করে না।

যারা 18+ কন্টেক্ট নিয়ে লেখালেখি করে, তারা সমাজে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে। কেননা এতে ছোট ছেলে মেয়ে অথবা কিশোরদের প্রবেশের কোনো বাধা-ধরা নিয়ম নেই। তাছাড়া তাদের ব্লগে পাবলিশ করা এডভারটাইজিং গুলোও পর্ণোগ্রাফি সম্পর্কযুক্ত ও অশীল হওয়াতে তা সম্পূর্ণ হারাম কাজ। এবং এতে সে গুনাহ আদায় করে নিচ্ছে।


অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা কি হালাল নাকি হারাম?

অনলাইনে কেউ যদি ব্যবসা করে আয় করতে চায়, তাহলে আমি বলব অবশ্যই সৎ পথে উপার্জন করলে তা হালাল হবে। আপনি গ্রাহকদেরকে আগে থেকে জানিয়ে রাখবেন কত অংশ লাভ নিচ্ছেন। অথবা তাদেরকে কিভাবে সার্ভিস প্রদান করবেন। 

কেননা, অনলাইনে দেখা যায় বেশিরভাগ গ্রাহকেরা কোন একটি কাজ করতে গেলে সে সম্বন্ধে কত টাকা লস করছে তার কোন হিসাব রাখে না। সে হয়তো ভাবছে যে, যে লোক সার্ভিস প্রোভাইড করছে সে নির্ধারিত হারে লাভ নিচ্ছে। কিন্তু ওই সার্ভিস প্রোভাইডার বা ব্যবসায়ী যদি কোন ইউজার থেকে একরকম, অন্যজন থেকে কায়দা করে বেশি লাভ নিয়ে নেয়, তাহলে অবশ্য অপরের অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হবে। এবং এমতাবস্থায় কাজটি হারাম বলে পরিগণিত হবে। 

ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে গেলে সবাইকে অবশ্যই ন্যায্য মূল্য প্রদান করতে হবে। 5 টাকার জায়গায় 50 টাকা লাভ নিলে তা হালাল রইবে না। এটা বর্তমান বাজারের বিভিন্ন মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মত কীর্তি হয়ে যাবে। যারা পণ্য মজুদ রেখে অপেক্ষা করে কখন দাম বাড়বে, এবং বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারবে। এতে করে আমজনতা ন্যায্য অধিকার পায় না।

আরেকটি বিষয় হলো, অনলাইনে কিন্তু চিত্রকর্ম নিয়ে কাজ আছে। অনেকেই ওয়েব ডিজাইনিং করে গ্রাফিক ডিজাইনিং বা চিত্রকর্ম তৈরি করে। তাদের কাজটি আমার মতে বৈধ হবে। কারণ যেকোনো কল্যাণকর বস্তু ইসলামে কখনো হারাম হতে পারেনা। যা বৈধ এবং মানুষের চাহিদা পূরণ করে প্রয়োজন মেটায় সে সমস্ত কাজ করা হালাল হওয়ার ই কথা। চিত্রকর্ম বলতে অশ্লীল কিছু নয়, বরং কার্ড ডিজাইন বিশেষ করে গ্রাফিক ডিজানকে বুঝিয়েছি।


অনলাইনে আয় করার কিছু দিক কেন হারাম?

এবার আসি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথায়। আমরা যারা অনলাইনে কাজ করি তাদেরকে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় 7 থেকে 8 ঘন্টা কাজ করতে হয়। অনলাইনে কাজ করতে গেলেই অনেক সময় পার হয়ে যাচ্ছে। অথবা যারা ফ্রিল্যান্সার এবং নতুন নতুন ফ্রিল্যান্সিং কাজ করছে তাদেরকে রাত জেগে 12 থেকে 14 ঘণ্টা পর্যন্ত অনলাইনে থাকতে হয়। 

এ ক্ষেত্রে অনেকেই খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমায় না। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এতে করে আল্লাহ তাআলার ইবাদত অনেক সময় ছুটে যায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত নষ্ট করে এমন সমস্ত কাজই হারাম। 

এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে এবং আল্লাহ তালার ইবাদত সঠিক রেখে যদি কাজ করা যেতে পারে তাহলে তবে তা হালাল হবে। এদিক দিয়ে সতর্ক থাকা লাগবে। কাজ হালাল বলে বসে থাকলে চলবে না। কাজের কারণে ইবাদতের যেন নস্ট না হয়।


Money Making এপ কি হালাল?

এবার আসি Money Making অ্যাপ অর্থাৎ অ্যাপ দিয়ে আয় করার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে পিটিসি ওয়েবসাইটে কাজ করা হালাল হবে কিনা? এক্ষেত্রে আমি About Islam নামে একটি ওয়েবসাইটের রেফারেন্স তুলে ধরব। যেখানে বলা আছেঃ

"কেউ কিশোর বয়সে থাকলেও অর্থ উপার্জন এবং একটি ভালো আর্থিক অবস্থার বিষয়ে চিন্তা করার মধ্যে কিছু ভুল নেই। হালাল ও জায়েয উপায়ে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায় এবং আল্লাহর গজব না নিয়ে কিভাবে তা উপভোগ করা যায় তা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ।

গেম খেলে অথবা Money making app থেকে আয় করার কথা বলছেন। এই প্রক্রিয়ার বিশদ বিবরণ একটি সঠিক বিচার গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এবং বিষয়টি সমালোচনামূলক। কারণ এই গেমগুলির মধ্যে,  এপগুলোতে কিছু কার্যক্রমে "জুয়া" জড়িত। এছাড়াও, গেমটি বা এপটিকে নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু থেকে মুক্ত হতে হবে। এবং খেলোয়াড়দের বা ইউজারদের উপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না নিশ্চিত করতে হবে।

আপনি যে কাজগুলির জন্য অর্থ উপার্জন করেন তা করার জন্য অ্যাপগুলি ব্যবহার করার জন্য, নিম্নলিখিত শর্তগুলির সাথে এটি অনুমোদিত:

প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েয হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, 

“যে ব্যক্তি হেদায়েতের দিকে আহবান করবে, সে তার অনুসরণকারীদের সওয়াবের সমান সওয়াব পাবে এবং তাদের সওয়াবের সামান্যতমও হ্রাস পাবে না। আর যে পাপের দিকে ডাকে সে ততটাই পাপী হবে, যতটা পাপী হবে যারা তাকে অনুসরণ করে। তাদের গুনাহ থেকে সামান্যও কমবে না।” (মুসলিম)

একটি কাজের জন্য আপনি যে অর্থপ পাবেন তা করার আগে আপনাকে কাজটির ফলাফল জানতে হবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহই ভালো জানেন।"

১৫টি কাজ, যেখান থেকে অনলাইনে আয় হারাম।অনলাইনে আয় করা কি হালাল 

এবার আমরা অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে ১৫ টি হারাম কাজ নিয়ে আলোচনা করব। যাতে হালাল-হারাম নিয়ে ধারণা স্পষ্ট হয়। তার আগে বলে দিই, অনলাইনে আয় করা কোনো ভাবে হারাম নয়। অসৎ ও দুষ্ট বস্তু অনলাইনেও থাকে, অফলাইনেও থাকে। এক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের ন্যায় আচরণ করাই কাম্য।


1.  লটারি খেলা।

ইসলামে লটারি, রেফেল উইন, লাকি স্পিনসহ যত কিছু আছে সবই হারাম। যদি লটারি জিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে নেন, তাও অনলাইনে। তাহলে আপনার জন্য তা হারাম। কেননা এর অর্থ আপনি নিজ যোগ্যতা দিয়ে আয় করেননি। পৃথিবীতে যত অর্থ আছে তার বিনিময়ে সম্পদ অর্জিত হয়। কেউই পরিশ্রম না করে অথবা কাজ না করে সম্পদ অর্জন করতে পারে না। কাজেই অবশ্যই হারাম বলে পরিগণিত হবে। কেননা সকল সম্পদের উপর সবার সমান হক আছে। ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হলে না-ইনসাফী কয়া হবে। অনলাইনে আয় কি হালাল এ বিষয়ে আরো বলব।


2. গান নিয়ে লেখালেখি বা ব্লগিং।অনলাইনে আয় করা কি হালাল ?

গান বাজনা নিয়ে ব্লগিং করা বা লেখালেখি করা হারাম। কেননা ইসলামে গান, বাজনা, বাদ্যযন্ত্র সবই হারাম বস্তু। প্রকৃতপক্ষে গান বাজানার মধ্য দিয়ে কেউ সুষ্ঠু বিনোদন লাভ করতে পারে না। এ ধরনের বিনোদন মানুষের কোন উপকার তো করেই না, বরঞ্চ মাঝে মধ্যেই ভুল পথে পরিচালিত করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইবাদত বিনস্ট করে।।


3. সেলিব্রেটিদের তথ্য প্রচার ও আপডেট জানানো।

অনেকেই নিউজ পেপার বা নিউজ পোর্টালে সেলিব্রেটিদের নিয়ে বিভিন্ন খবর পাবলিশ করে। অন্যের ব্যক্তিগত জীবন খোলাসা করা বা জনসম্মুখে নিয়ে আসা খুব একটা উচিত কাজ নয়। মাঝে মাঝে সেলিব্রিটিদের নিয়ে আমরা বিভিন্ন রসালো ফ্যাক্ট উন্মোচন করি। অথবা তাদের খবর প্রকাশ করতে গিয়ে খোলামেলা ছবি পাবলিশ করি, যা অবশ্যই হারাম।


4.    বর্ণবাদ, ইসলামে নিষিদ্ধ বস্তুর স্বপক্ষে লেখালেখি।

বর্ণবাদ, নারীবাদ (কোনো কোনো দিক দিয়ে ইহা সীমা লংঘন করে) বা সমাজতন্ত্র এ সমস্ত বিষয় নিয়ে লেখালেখি থেকে বিরত থাকুন। ইসলামের বহির্ভূত বা নিষিদ্ধ সকল বিষয়ের পক্ষ নিয়ে লেখা অনুচিত কাজ।


5. লেখালেখি করে ভবিষ্যত বলা।

অন্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে লেখালেখি অথবা horoscope ব্লগিং হারাম।


6.  কপিরাইট লংঘন করে মুভি, টিভি সিরিজ পাব্লিস।

অনলাইনে মুভি, টিভি সিরিয়াল, এনিমেশন ইত্যাদি কপিরাইট ছাড়া পাবলিশ করা ও ইউজারদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হারাম কাজ।

অসংখ্য ব্লগার আছে যারা ফ্রিতে মুভি টিভি সিরিয়াল পাবলিশ করে অর্থ উপার্জন করছে। এর মাধ্যমে কপিরাইট ছাড়া কোন কনটেন্ট পাবলিশিং এর মাধ্যমে তারা চুরি করছে। এবং হারাম কাজে লিপ্ত হচ্ছে।

ইসলামের চুরি করা হারাম কাজ ও অপরাধ। কন্টেক্ট চুরি করা, বিশেষ করে প্লাগারিজম করা, অন্যের কন্ঠ হুবহু কপি করা, চুরি করার মধ্যে পড়ে। এবং তা হারাম।

পড়ুনঃ


8. লেখকের স্বীকৃতি ছাড়া ফ্রিতে ইবুক শেয়ার।

অনেক কন্টেন্ট পাবলিশার  ফ্রী তে ই-বুক ইউজারদের  সাথে শেয়ার করে। গুগোল ড্রাইভ, মেগা ড্রাইভ ব্যবহার করে ই-বুক শেয়ার করে। কপিরাইট ছাড়া ফ্রী তে ই-বুক পাবলিশ করা অনুচিত কাজ। যদি না এ ব্যাপারে প্রোডাক্টের মালিক স্বীকৃতি না থাকে।


10. স্ক্যাম প্রমোশন করে এমন সব ব্লগঃ

কোন ব্লগ পোস্টে মাধ্যমে যদি স্ক্যাম করা হয়। অথবা অযৌক্তিকভাবে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়ার ট্রিক্স, বা কোনোভাবে অডিয়েন্সকে বোকা বানানো হয়, তবে সে রকম লেখা বা ব্লগ পোষ্ট হারাম কাজ।


11. পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট থেকে আয় করা হারাম।

পর্নোগ্রাফি বা 18 প্লাস কন্টেন্ট রিলেটেড ওয়েবসাইটগুলো অবৈধ এবং হারাম। এক্ষেত্রে ওই অথোর বা মালিক হারাম কাজে লিপ্ত থাকে এবং এতে সে গুনার ভাগিদার হয়।


আমাদের সকলের আদর্শ প্রিয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেনঃ 

"যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন করে তার পরিবার-পরিজনের জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করে সে যেন আল্লাহর পথের একজন যোদ্ধার এবং যে শেষ অবধি নিজেকে সংযত রেখে হালাল পথে উপার্জনের চেষ্টা করে, সে শহীদের মর্যাদা পায়।"

তিনি আরও বলেন:

"মানুষ হারাম জিনিস থেকে যে সম্পদ উপার্জন করে তা সদকা (দান করা) করলেও আল্লাহর কাছে তা কবুল হবে না। মৃত্যুর পর যদি সে হারাম পথ ছেড়েও দেয়, তারপরো  তা জাহান্নামের আগুন বাড়িয়ে দেবে।"

আল্লাহ সবাইকে হালাল পথে উপার্জনের তৌফিক দান করুক। আরো পড়ুনঃ
আজকে আমরা জানলাম অনলাইনে ইনকাম করা কি জায়েজ কিনা? অথবা অনলাইনে আয় করা কি হালাল ? আসলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হারাম বিষয় থাকলেও পুরোপুরি হারাম বলা চলে না। বরং হালাল উপায়েও অনলাইনে ইনকাম করা যায়। আজকের পোস্ট ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানান। ভালো থাকবেন। খোদা হাফেজ।
Rakib

রাকিব "এক্সপার্ট বাংলাদেশ" এর প্রতিষ্ঠাতা এবং মালিক। সে অবসর সময়ে ব্লগিং ও লেখালেখি করতে ভালোবাসে। তাছাড়াও, অনলাইনে নতুন কিছু শেখা তার প্রধান শখ।

Post a Comment

কমেন্ট করার মিনতি করছি। আমরা আপনার কমেন্টকে যথেস্ট মূল্য প্রদান করি। এটি আমাদের সার্ভিসের অংশ।

তবে কোনো ওয়েবসাইট লিংক প্রকাশ না করার অনুরোধ রইল।

Previous Post Next Post