লিওনেল মেসির জীবন কাহিনী | মেসির জীবনের অজানা ফ্যাক্ট

লিওনেল মেসির জীবন কাহিনী :

লিওনেল মেসি একজন আর্জেন্টাইন ফুটবল খেলোয়ার। তাকে আধুনিক যুগের সবচেয়ে মহান ফুটবলার পদে আসন দেয়া হয়। মেসি আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল টিমে এবং FC বার্সেলোনা হয়ে স্পেনিশ লা লীগায় ফুটবল খেলেন। 

নতুন সংযোজনঃ মেসি বর্তমানে পিএসজি তে প্লে মেকার হয়ে ওয়ান লীগ খেলছেন। বার্সেলোনার সাথে তার সাম্প্রতিক বিচ্ছেদ হয়। 

মেসি 'ফিফা বিশ্বসেরা প্লেয়ার' অর্জন করেন এ পর্যন্ত ৪ বার। যেটি এখন পর্যন্ত ফুটবল বিশ্বে একটি রেকর্ড হয়ে দাড়িয়েছে। তাকে মহান ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনার পর সর্বোচ্চ আর্জেন্টাইন ফুটবলার হিসেবে মান্য করা হয়। তার কারণ তার ফুটবল খেলার বিশেষ জাদুকরী দক্ষতা এবং প্রতিদ্বন্ধীদের ড্রিবলিং করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অসামান্য ক্ষমতা। তাকে যদি শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গোল-স্কোরার, প্লে-মেকার হিসেবে খ্যাতনামা দেয়া হয়, তাহলেও ভুল হবে না। লিওনেল মেসির জীবন কাহিনী একই সাথে সুখের আবার দুঃখের।

আমি ঐ খেলোয়াড়কে দেখেছি, যে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলে আমার জায়গার অধিকার গ্রহণ করবে। এবং তার নাম মেসি। মেসি একজন প্রতিভাধর ও অসামান্য খেলোয়ার। তিনি আরও উন্নত খেলোয়াড় হতে পারবেন।

তার সর্বোত্তম ফুটবলার হওয়ার সম্ভাবনা সীমাহীন। এবং আমি মনে করি, আর্জেন্টিনার সেরা খেলোয়াড় হওয়ার জন্য যা কিছু লাগে, তার সবই তিনি পেয়েছেন।

- দিয়েগো ম্যারাডোনা

একটা কথা বলি- আপনি যদি, the greatest footballer of all time লিখে সার্চ দেন, তাহলে দিয়াগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে লেখা পুরো একটি ব্লগ পাবেন।




লিওনেল মেসির জীবনী (জন্ম, ফুটবলে যোগদান, প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা)


পরিবার-পরিচিতিঃ

লিওনেল মেসির জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ শে জুন। তিনি আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরের একটি শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম নেন। তাঁর বাবা ছিলেন একটি কারখানায় কর্মরত স্টিলের শ্রমিক। এবং মা ছিলেন একজন ক্লিনার। 


ফুটবল-প্রেমি মেসিঃ

তিনি খুব অল্প বয়স থেকেই ফুটবল খেলার মায়ায় জড়িয়ে পড়েন। বাল্যকাল থেকেই তিনি ফুটবল খেলতে শুরু করেছিলেন। এবং তার প্রতিভা অতি শীঘ্রই সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে। তবে, মাত্র ১১ বছর বয়সেই সমবয়সী সকলের তুলনায় মেসি উচ্চতা জনিত সমস্যার কারণে পিছিয়ে পড়েন।


মেসি বাল্যকালের প্রতিবন্ধকতা ও বার্সেলোনায় যোগদানঃ

আমাদের শরীরের উচ্চতার জন্য দায়ী গ্রোথ হরমোন। মেসির বয়স যখন ১১, ঠিক তখনই মেসির গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি (growth hormone deficiency) ধরা পড়ে। এটি এমন একটি দৈহিক অবস্থা যা আমাদের উচ্চতার বৃদ্ধিকে স্থির করে দেয়। এবং এর ব্যয়বহুল চিকিত্সার জন্য ব্যয়বহুল ওষুধের ব্যবহার সহ মানব বৃদ্ধিকারক কৃত্রিম হরমোনের প্রয়োজন ছিলো। তার স্থানীয় ক্লাব “রিভার প্লেট” মেসিকে দিয়ে ক্লাবে স্বাক্ষর করতে ব্যাপক আগ্রহী ছিল।  

কিন্তু তার চিকিত্সার জন্য কোনো অর্থ দিতে আগ্রহী ছিল না। তবে মেসিকে বার্সেলোনার সাথে একটি ম্যাচ খেলার ট্রায়াল দেয়া হয়েছিল। যাতে করে তিনি বার্সেলোনা যুব ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ পান। এবং কোচ কার্লস রেক্সাচ বালক মেসির জাদুকরী খেলায় ও তার অসাধারণ ড্রিবলিংয়ে বেশ মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি মেসির সাথে বার্সেলোনা যুব দল হয়ে খেলার একটি চুক্তি (একটি কাগজের ন্যাপকিনে লিখিত!) স্বাক্ষর করিয়েছিলেন। 

যার মধ্যে স্পেনে মেসির চিকিত্সার জন্য যাবতীয় অর্থ প্রদান করাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মেসি তার বাবার সাথে বার্সেলোনায় চলে এসে মর্যাদাপূর্ণ এফসি বার্সেলোনা যুব একাডেমিতে অংশ নিয়েছিলেন। বার্সেলোনার যুব দলে অংশ নিয়ে, তিনি একাই একটি ম্যাচে ৫টি গোল করেন।


নতুন জীবন শুরু করতে আমি স্বপরিবারকে আর্জেন্টিনায় ছেড়ে এসেছি। প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করেছি। তবে আমার স্বপ্ন অর্জনের জন্য আমি যা কিছু করেছি, এই ফুটবলের জন্যই করেছি। এ কারণেই আমি কখনো মজা-মস্তি করতে যাইনি, বা অন্য অনেক কিছুই করি নি।

- লিওনেল মেসি


ভিন গ্রহের ফুটবলার মেসিঃ

মেসি খুব দ্রুত ফুটবল খেলায় র্যাংক করতে শুরু করেন। এরই মধ্য দিয়ে স্পেনিস ক্লাব ফুটবলে যথেস্ট অগ্রগতি অর্জন করেছিলেন। এবং ২০০৪/০৫ মৌসুমে লিগ ফুটবলে গোল করার ক্ষেত্রে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়ে তিনি তাঁর প্রথম স্বীকৃতি অর্জন করেন।  ২০০৬ সালে মেসি বার্সেলোনার দ্বিত বিজয়ী দলের অংশী ছিলেন। 

যা লা লিগা (স্প্যানিশ লিগ) এবং চ্যাম্পিয়ন্স লীগ উভয়ই জিতেছিল। ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড এসব দেশের মধ্যকার শীর্ষ ক্লাবগুলো নিয়ে যে ফুটবল লীগ অনুষ্ঠিত হয়, তাই চ্যাম্পিয়নস উয়েফা লীগ। ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়নস লীগে তখন বার্সেলোনা একটি স্প্যানিস ক্লাব হয়ে জিতে নেয়।

পরের মৌসুমের মধ্যে, (২০০৬-০৭) মাত্র ২০ বছর বয়সী মেসি প্রথমবার নিজের স্বপ্ন পূরণে স্ট্রাইকার হোন। এবং তখন বার্সেলোনা দলের অপরিহার্য অংশ ছিলেনও বটে। ২৬টি লিগ গেমসে বা ম্যাচে ১৪টি গোল করেছিলেন তরুন মেসি। লিওনেল মেসির জীবন কাহিনী জানুন।

২০০৯-১০ মৌসুমে, মেসি তার সমস্ত প্রতিযোগিতায় ৪৭টি গোল করেছিলেন বার্সেলোনার হয়ে। রোনালদোর রেকর্ডও তার সমান ছিল। পরপর মেসি তার নিজের রেকর্ডগুলি আরো উন্নত করতে থাকেন। এবং পরপর নিজের করার রেকর্ড ভাঙতে থাকেন। ২০১২ সালে, তিনি সর্বাধিক গোলের জন্য সর্বকালের বিশ্ব রেকর্ডটি ভঙ্গ করেছিলেন। 

২০১২ সালে ক্যালেন্ডার বছরে তাঁর লীগ গেমসে মোট গোল স্কোর ছিল ৯১।  জার্মান গার্ড মুলারের ৮৫ স্কোরের রেকর্ডটি ভঙ্গ করেন। এবং ১৯৫৮ সালে পেলের মাইলফলক ছিল পেলের ৭৫টি গোল।

আমার রেকর্ডটি ৪০ বছর ধরে টিকে ছিল। - এক বছরে ৮৫ গোল! - এবং এখন একজন বিশ্ব সেরা খেলোয়াড় এটি ভেঙে দিয়েছে। এবং আমি তার জন্য আনন্দিত। তিনি একজন অবিশ্বাস্য খেলোয়াড়, বিশাল ব্যাপার। 

-গার্ড মুলার

২০১৩ সালের শুরুতে,  ক্লাব ফুটবলে মেসি মোট ৩৫৯ টি ম্যাচে উপস্থিতি থেকে ২৯২টি গোল করেছেন । এবং আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখন পর্যন্ত ৭৬ টি ম্যাচে উপথিত থেকে ৩১টি গোল করেছেন।(তথ্য ঘাটতি থাকতে পারে। কারণ এটি আমার পূর্বের লেখা নিবন্ধ।)

২০১২ সালের শেষে মেসি রাশিয়ান ক্লাব দলের হয়ে খেলতে খুব লাভজনক এবং খুবই এক্সপেন্সিভ একটি অফার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারা মেসিকে বছর শেষে ২০ মিলিয়ন ডলার বেতন দিতো। এবং মেসিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল খেলোয়াড় হিসাবে গড়ে তোলত। 

তিনি অফারটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ তিনি বড় ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছেন। এবং রাশিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে তার বিশেষ অসুবিধাও ছিলো। তাই তা নিয়ে তিনি অনিশ্চিত ছিলেন। এর পরিবর্তে, তিনি ২০১৮ এর শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেসি বার্সেলোনার প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি প্রকাশের কথা জানান।

বার্সেলোনা আমার জীবন। আজ আমি যেখানে আছি, সেখানে তারাই আমাকে নিয়ে এসেছিল। আমি সে বার্সাকে ছাড়তে পারি না, আমি ছাড়তে চাইও না। আমি জানি, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খুব ভালো। তবে আমি নিজেকে ইংল্যান্ডে খেলতে দেখতে চাই না। কারণ আমার হৃদয় সবসময়ই বার্সেলোনার সাথেই থাকে। 

- লিওনেল মেসি

এখন সেই বার্সাকেই মেসি ছাড়তে চাচ্ছেন কত কস্টে সেটা হয়তো সকলেরই অজানা। (একবার মেসি নিজ ইচ্ছায় বার্সেলোনাকে ছাড়তে চেয়েছিলেন। আমরা তার ইন্সটাগ্রাম পোস্টেই দেখি।)

সুইডিশ ফুটবলার ইব্রাহিমোবিচকে আমরা কম-বেশি সকলেই চিনি। তিনি একদা মজা করে বলেন,

আমি এ বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ফুটবলার। কিন্তু মেসি আসলে এ গ্রহেরই কেউ নয়। সে ইউনিক। সে এমন ধাচের খেলোয়ার যার মতো হওয়া আসলে সম্ভব না।

ম্যালকন মেসিকে এলিয়েন ফুটবলার বলে ব্যাখ্যা করেন।


মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারঃ

১১ বছর বয়স থেকেই মেসি স্পেনে লালিত-পালিত হয়েছিলেন বলে তাঁর নিজের  স্পেনীশ নাগরিকত্ব আছে। ২০০৪ সালে তাকে স্পেনের অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।  তবে মেসি তার জন্মের দেশ আর্জেন্টিনার হয়েই খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ২০০৫ ফিফা যুব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি আর্জেন্টিনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। 

হাঙ্গেরির বিপক্ষে বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচের মধ্য দিয়ে মেসি ২০০৫ সালের আগস্টে পুরোপুরি আন্তর্জাতিকভাবে নিজের প্রথম আত্মপ্রকাশ করিয়েছিলেন। তার প্রথম খেলায় একজন খেলোয়াড়ের ফাউল অভিযোগে মেসিকে ম্যাচটি ছাড়তে হয়েছিল।  এই সিদ্ধান্তটি আসলে বিতর্কমূলক ছিল। এবং মেসি নিয়মের সাথে মিল রেখে কোনো অসদাচরণ করেন নাই। তিনি নম্র- ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে ডাইভিংয়ের অভিযোগ খুব কমই করা হয়েছে।

২০০৬ সালে তিনি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ খেলতে আর্জেন্টিনার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়ে মাঠে অভিষেক হয় তার। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা বাদ পড়ে গিয়েছিলো। ২০০৮ সালে তিনি বেইজিং অলিম্পিক ফুটবলে আর্জেন্টিনার হয়ে একটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। প্রথমদিকে, বার্সেলোনা তাকে খেলার অনুমতি দেয়নি। তবে নতুন কোচ পেপ গার্দিওলা তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।

২০১০ বিশ্বকাপে, মেসি দশ নম্বরের জার্সি পরেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক দিয়াগো ম্যারাডোনার ১০ নম্বরের জার্সি। এবং ২০১০ সালে আর্জেন্টিনাকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে সহায়তা করার জন্য দুর্দান্ত খেলেছিলেন। আর মেসি গোল করতে যথেস্ট লড়াই করেছিলেন। সবশেষে আর্জেন্টিনা একরাশ হতাশা নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে ৪-০ ব্যবধানে হেরে মাঠ ত্যাগ করে। মেসি স্বীকার করেছেন যে, তিনি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে ব্যাপক মরিয়া ছিলেন। 

বিশ্বকাপে মেসির জন্য সাফল্যই হবে মহত্ত্বের শেষ পরীক্ষা। বিপরীতে, পেলে যদি হয় তার সেরা যাচাই করার সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্ধী। তাহলে ব্রাজিলের তিনবারের বিশ্বকাপে পেলের জয়লাভ করা (’58, ’62 এবং ’70) মেসির ফুটবল বিশ্বের একমাত্র লিভিং লিজেন্ড হওয়ার বাধা। আমরা সবাই জানি, পেলের সময়কালীন ব্রাজিলের ঐ দলটাই এত মজবুত ছিল যে, বিশ্বকাপ জেতা তাদের জন্য কোনো ব্যাপারই না।

মেসিকে  আধুনিক যুগের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেকোনো প্রতিপক্ষকে পাশ কাটিয়ে বল  চালিয়ে নেওয়ার মতো তাঁর অব্যর্থ ক্ষমতা রয়েছে। ম্যারাডোনা তাঁর বল নিয়ন্ত্রণ ও ড্রিবিলিংকে সর্বোত্তম বলে বর্ণনা করেছেনঃ 

আদতে বল তার পায়ে আঠার মতো করে আটকানো থাকে। আমি আমার ক্যারিয়ারে অনেক দুর্দান্ত খেলোয়াড় দেখেছি। তবে মেসির মতো বল নিয়ন্ত্রণে থাকা কাউকে আমি কখনো দেখিনি। 

মেসি তার ড্রিবলিং নিয়ে খুব সুন্দর উক্তি খানা বর্ণনা করেছেন। একটি শিশু কীভাবে ফুটবল খেলে তার আনন্দ ধরে রাখতে চায়- এই উপমায় নিজের উক্তিখানা তুলে ধরেছেনঃ

আমি প্রকৃত পক্ষে কোনো কিছুতেই পরিবর্তন আনি নি। আমার খেলার ধরন এখনও একটি শিশুর মতোই। আমি জানি যে, দিনশেষে এটি আমার কাজ। এবং আমাকে এটি অন্য উপায়েও করা উচিত। তবে ফুটবল যে একটি খেলা সে বিষয়টি অবশ্যই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। নিজেকে আনন্দিত করা, নিজে সুখী হওয়াই বাঞ্ছনীয়। বাচ্চারা এটাই করে, এবং আমিও একই কাজ করি।  (বার্সা)

- লিওনেল মেসি।


জানুয়ারী, ২০১৩ সালে চতুর্থবারের মতো ব্যালন ডি’অর জয়ের পরে মেসি বলেছেন:

আজকের সত্যি এটাই যে, এটি আমার জন্য আসলেই অবিশ্বাস্য। আমার কাছে এই চতুর্থ পুরস্কারটি শব্দে ব্যাখ্যা করতে গেলে দুর্দান্ত (Great)।

 ( সূত্রঃ বিবিসি)


মেসি ও রোনালদো ইস্যু

মেসিকে প্রায়শই প্রাক্তন রিয়েল মাদ্রিদের গোল-স্কোরার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সাথে তুলনা করা হলেও, দুজনেই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে তুলনা করার ক্ষেত্রে আগ্রহী নন।

মেসির নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে এবং আমারও আছে। তার  খেলা আছে এবং আমারও আছে। আমিও তাঁর মতোই বড় ক্লাবে খেলি। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদা। তবে এখন তিনি সেরা।

- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে। 

তখন কিন্তু মেসি তার ক্যারিয়ারের পিকে ছিল। তাই রোনালদো বলেন, এখন তিনিই সেরা। কিন্তু বাতাস ও স্রোত কখনো এক দিক দিয়েই বয়ে চলে না। 


মেসির গোলস্কোরিং রেকর্ডঃ

সূত্র: ক্রিস্টোফার জনসন, বার্সেলোনা এফসি। সিসি-এসএ-2.5

  • যে কোনও মানদণ্ড অনুসারে মেসির গোল স্কোরিং রেকর্ডটি অপরিমাপযোগ্য। জুন, ২০১৯ এর মধ্যে, তিনি বার্সেলোনা এফসির হয়ে ৪৪৫ টি অফিসিয়াল ম্যাচে ৪১৯ গোল করেছেন।

  • ২০১২/১৩ সালে মেসি টানা ২১ টি ম্যাচে গোল স্কোর করে সর্বকালের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন (২১ টি ম্যাচ/গেম থেকে ৩৩ গোল)

  • তিনি এক ক্যালেন্ডার বছরে সর্বাধিক গোলের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছেন। - ২০১২ সাল ক্ল্যালেন্ডার বছরের মধ্যে ৯১ গোল স্কোর।

  • তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল করেছেন।

  • আর্জেন্টিনার হয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক রেকর্ড ১৩৩ টি ম্যাচে উপস্থিত থেকে 68 গোল।

মেসির বড় সম্মানঃ

লিওনেল মেসির জীবন কাহিনীর একটি অংশ বার্সেলোনা। 

বার্সেলোনাঃ

স্প্যানিশ লা লিগার শিরোনাম। ( 10 বার)

2004–05, 2005–06, 2008–09, 2009–10, 2010 ,11, 2012–13, 2014–15, 2015–16

স্পেনীস লা-লীগাঃ ( 6 বার)

 

সুপারকোপা দে এস্পিয়া ( 6 বার)

 

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ( 4 বার)

২০০৫০৬, ২০০৮০৯, ২০১০-১১, ২০১৪-১৫

উয়েফা সুপার কাপ (3 বার)

 

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ (3 বার)

 

আর্জেন্টিনাঃ

টাইটেল

 বছর/ অবস্থান

অলিম্পিক স্বর্ণপদক

২০০৮ সাল

ফিফা অনূর্ধ্ব -২০ বিশ্বকাপ

২০০৫ সাল

 

2006 বিশ্বকাপ

কোয়ার্টার ফাইনাল।

2014 বিশ্বকাপ

রানার্স আপ

2010 বিশ্বকাপ

কোয়ার্টার ফাইনাল।

2018 বিশ্বকাপ

-

মেসি প্রায়শই ক্লাব ট্রান্সফার হওয়ার জন্য বড় বাজেট সহ অন্যান্য ফুটবল ক্লাবগুলোর লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন। তবে তিনি বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের প্রতি অনুগত। তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম। 

তার Base বেতন প্রতি বছর ৪০ মিলিয়ন ইউরো হিসাবে অনুমান করা হয়। এটা অবশ্য আগের হিসেব। তবে বর্তমানে আরও বেশি।

সমস্ত উত্স থেকে তাঁর সম্মিলিত আয় আসে ২০১৮ সালের হিসেবে ১২৬ মিলিয়ন ইউরো। এটি তাকে সর্বাধিক বেতনের খেলোয়ার ও স্টারে পরিণত করেছে

- ফোর্বসের মতে। 

২০১৮ থেকে, বার্সেলোনা থেকে তার সাপ্তাহিক বেতন প্রতি সপ্তাহে ৬৬৭০০০ ডলার ঠিক করা হয়।


ব্যক্তিগত জীবনঃ

মেসির নিজস্ব ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবন রয়েছে। তিনি নিজের শহর রোজারিওতে নিজের বাড়ি, অবস্থান রাখার চেষ্টা করেন। তার আর্জেন্টিনার এক বান্ধবী আন্তোনেলা রোকুজ্জো, যাকে তিনি পরবর্তীতে বিয়ে করেন। এবং তাদের সম্ভবত ৩টি সন্তান রয়েছে। তার প্রথম সন্তান থিয়াগো মেসি, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করে। তার দ্বিতীয় সন্তান মাতেও মেসি, সোশ্যাল মিডিয়াতে সে তার দুষ্টুমির জন্য প্রসিদ্ধ।

মাতেও মেসির পছন্দের টিম রিয়াল মাদ্রিদ। আর পছন্দের খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। অপরদিকে রোনালদোর সন্তান রোনালদো জুনিয়রের পছন্দের খেলোয়াড় লিওনেল মেসি।


মেসির সামাজিক অবদানঃ

মেসি ইউনিসেফের রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করেন। এবং তিনি নিজস্ব দাতব্য ফাউন্ডেশনও চালান, তার সামাজিক অবদানের মধ্যে এটি অন্যতম। শিশুদের জন্য শিক্ষা এবং খেলাধুলাকে তিনি সমহারে সমর্থন করেন।

নিজের ব্যয়বহুল চিকিত্সা করার কারণে, তিনি আর্জেন্টিনার হাসপাতালগুলোকেও নিজের মতো করে চিকিত্সার জন্য অর্থ প্রদানে সহায়তা করছেন। কারণ আর কেউ না জানলেও মেসি ঠিকই জানেন, শারীরিক কোনো সমস্যা কাউকে শিশুকাল হতেই মানসিক অবস্থার ব্যাপক হানি ঘটায়। লিওনেল মেসির জীবন কাহিনী সম্বন্ধে জেনে নিন।


বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন কিং মেসিঃ

২০১৪ সালের বিশ্বকাপে মেসিঃ

অনেক ভাষ্যকার বলেছেন যে, লিওনেল মেসি বিশ্বকাপ বাদে সব প্রতিযোগিতায় তাঁর সেরা পারফরম্যান্স প্রমান করেছেন। ২০০৬ এবং ২০১০ বিশ্বকাপ দুটিতেই আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে গিয়েছিল। মেসি তার সেরা ফর্মে আদতে ছিলেন না।

ব্রাজিলের ২০১৪ এর বিশ্বকাপটিতে মেসির পক্ষে ও আর্জেন্টাইন সকলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবদান রাখার একটি দারুন সুযোগ। উদ্বোধনী খেলায় বসনিয়া - হার্জেগোভিনায় মেসি দুর্দান্ত গোল করেছিলেন, আর্জেন্টিনাকে জয়ের সূচনা দিয়ে। আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে সহায়তা করার জন্য তিনি চারটি গোল করেছিলেন । 

অবশেষে ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের এই করুণ  ফলাফল সর্বজনীনভাবে সমর্থিত না হলেও, মেসিকে টুর্নামেন্টের ‘গোল্ডেন বল’ পুরষ্কার দেওয়া হয়েছিল। এতে কোনো ভুল  নেই যে, তিনি আর্জেন্টাইন রাজপুত্র। 

টুর্নামেন্টের পরে মেসি জবাব দিলেন:

আমি গোল্ডেন বলের বিষয়ে চিন্তা করি না। আমি কেবল কাপ জেতার সম্ভাবনা থেকে ছিটকে গেছি দেখে বিরক্ত হয়েছি। আমাদের সেরা সুযোগ/সম্ভাবনা ছিল। আমরা জানতাম যে ,আমরা ফাইনাল খেলায় আধিপত্য বিস্তার করতে পারবো না। তবে আমরা কী করতে চাই সেটা আমরা ঠিকই জানতাম। এই মুহুর্তে আমি আমার পুরষ্কারের বিষয়ে চিন্তা করছি না। আমি কেবল কাপটি তুলে আর্জেন্টিনায় আনতে চেয়েছিলাম। ব্যথা সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। 

২০১৬ সালের জুন মাসের কথা। মেসি তখন খুব হতাশ। মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণাও করেছিলেন। পেনাল্টি মিস করার পরে আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকার ফাইনাল থেকে ছিটকে যায়। যাইহোক, মেসি পরে তার সিদ্ধান্তটিকে উল্টে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি আর্জেন্টিনাকে খুব ভালবাসেন। এবং

আমি দেখছি, আর্জেন্টিনার ফুটবলে অনেক সমস্যা আছে। এবং আমি আরও একটি সুযোগ তৈরি করার ইচ্ছা করছি না।

তবে, মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে এসে আর্জেন্টিনার নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১৮-এর বিশ্বকাপে। কোনো জাতির ব্যাপক প্রত্যাশার ভার বহন করা সত্ত্বেও, বিশ্বকাপটি আসলে আর্জেন্টিনার জন্য দুর্দান্ত হতাশার ছিল। যাইহোক, ২০১৮/১৯ মৌসুমে মেসি বার্সেলোনার সাথে তার স্বাভাবিক ছন্দে জাদুকরী পারফরম্যান্সে ফিরে এসেছিলেন।

মেসির বর্তমান নেট মূল্য ৬০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। যেখানে বর্তমান ২০২১ আপডেটে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নেট মূল্য ৫০০ ইউএস ডলার। ২০২১ আপডেটে লিওনেল মেসি সবচেয়ে ধনী ফুটবলার Faiq Bolkia ব্যতিত।

পড়ুনঃ মেসি কেন পিএসজিতে? মূল কারণ কি?

শেষকথাঃ

ফুটবল খেলা একটি শিল্প। লিওনেল মেসি, রোনালদো, ম্যারাডোনা, এমনকি পেলে তারা হলেন সেই শিল্পের শিল্পী। শিল্পকে ভালোবাসার অধিকার সবার আছে। শিল্পীর নান্দনিক কাজের বহাল করা ও  তাকে ভালোবাসা উন্মুক্ত। তাইতো আমি নিজেও ফুটবলকে ভালোবাসি। ভালোবাসি মেসিকে।

আর্জেন্টাইন স্বর্ণপুত্র এভাবেই ভক্তদের মন ভরাক এই প্রত্যাশায় লিওকে নিয়ে এই প্রতিবেদনের এখানেই সমাপ্তি। ভালো থাকবেন।


Rakib

রাকিব "এক্সপার্ট বাংলাদেশ" এর প্রতিষ্ঠাতা এবং মালিক। সে অবসর সময়ে ব্লগিং ও লেখালেখি করতে ভালোবাসে। তাছাড়াও, অনলাইনে নতুন কিছু শেখা তার প্রধান শখ।

Post a Comment

কমেন্ট করার মিনতি করছি। আমরা আপনার কমেন্টকে যথেস্ট মূল্য প্রদান করি। এটি আমাদের সার্ভিসের অংশ।

তবে কোনো ওয়েবসাইট লিংক প্রকাশ না করার অনুরোধ রইল।

Previous Post Next Post